

ডেলিভারী টিম
আমাদের রয়েছে বিশ্বস্ত ডেলিভারী নেটওয়ার্ক যারা নিজ দায়িত্তে আপনাদের নিকট খাবার পৌঁছে দিবে
ডেলিভেরী টিমের বৈশিষ্ট্য
- যথাসময়ে কাস্টমারের নিকট পণ্য পৌঁছে দেয়া এবং কাস্টমারের সন্তোষটি অর্জন করা
.
850.00৳ Original price was: 850.00৳ .800.00৳ Current price is: 800.00৳ .KG
মুক্তাগাছার মণ্ডার ইতিহাস শুরু হয় প্রায় ২০০ বছর আগে, ব্রিটিশ শাসনামলে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদাররা ছিলেন সংস্কৃতিমনা ও রসনাবিলাসী। তাদের দরবারে বর্ধমান, নদিয়া, কুষ্টিয়া, বিক্রমপুর, কলিকাতা ও ঢাকা থেকে নামকরা বাবুর্চি ও মিষ্টান্ন কারিগরদের আমন্ত্রণ জানানো হতো।
এই পরিপ্রেক্ষিতে একদিন দরবারে আবির্ভূত হন “গয়ানাথ ঘোষ” নামে একজন প্রতিভাবান মিষ্টির কারিগর। তিনি প্রথমবারের মতো রাজ দরবারে তৈরি করেন এক ভিন্নধর্মী মিষ্টান্ন—যেটির নাম ছিল ‘মণ্ডা’। এই মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ হয়ে জমিদাররা গয়ানাথকে পুরস্কৃত করেন এবং তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন রাজপরিবারের জন্য নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহের। এখান থেকেই শুরু হয় ‘মুক্তাগাছার মণ্ডা’র ইতিহাস।
তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা অঞ্চল ক্রমেই এই মিষ্টির জন্য খ্যাতি অর্জন করতে থাকে। পরে গয়ানাথ ঘোষের পরবর্তী বংশধররাও এই মিষ্টান্ন তৈরির গোপন কৌশল অবলম্বন করে, এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে তা রক্ষা করে আসছেন।
গোপন রেসিপির রহস্যময়তা
মুক্তাগাছার মণ্ডার সবচেয়ে বড় রহস্য এর রেসিপি। এই রেসিপি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটি নির্দিষ্ট পরিবার বা গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আজও মুক্তাগাছার “গয়ানাথ ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার”, “সত্যেন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” এবং “অমৃত ঘোষের দোকান”—এই বিখ্যাত তিনটি পরিবারিক প্রতিষ্ঠান এই মিষ্টি তৈরি করে থাকে।
রেসিপিটি এতটাই গোপনীয়ভাবে সংরক্ষিত যে, দোকানের বাইরে দাঁড়িয়েও আপনি বানানোর পদ্ধতি বুঝে উঠতে পারবেন না। সেখানে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় প্রতিদিন সকালে দুধ, চিনি, গুঁড় ও নানা সুগন্ধি উপাদান দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দেওয়া হয়। অনেক সময় এই জ্বাল চলে রাতভর, যাতে দুধের ঘনত্ব হয় ঠিকমতো, এবং তৈরি হয় এক চূড়ান্ত গন্ধ ও রং।
প্রতিদিন এই মিষ্টি বানাতে যে শ্রম, ধৈর্য এবং শিল্পকৌশল প্রয়োজন, তা যেন একটি প্রাচীন চিত্রকর্ম রচনার মতই। নিচে ধাপে ধাপে মণ্ডা তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
খাঁটি গরুর দুধ সংগ্রহ করে সেটি ছেঁকে বিশুদ্ধ করা হয়।
বড় মাটির হাঁড়িতে বা পিতলের কড়াইয়ে দুধ বসিয়ে কাঠের আগুনে তা ৮–১০ ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বাল দেওয়া হয়। দুধ ঘন হয়ে খয়েরি রঙ ধারণ করে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াই মণ্ডাকে আলাদা করে তোলে।
ঘন দুধে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি ও গুড় যোগ করে তা আবারও নেড়েচেড়ে একটি নির্দিষ্ট কনসিস্টেন্সিতে আনা হয়।
ঘন রসকে ছোট ছোট পাত্রে ঢেলে মণ্ডার আকৃতি দেওয়া হয়। সাধারণত রূপার পাতলা কাগজ বা মাটির সানকিতে ঢেলে তা পরিবেশনযোগ্য হয়।
শেষ ধাপে মণ্ডা ঠাণ্ডা করা হয়। কিছু মণ্ডা রসে ভিজিয়ে পরিবেশন করা হয়, আবার কিছুটা শুকনো ধরনেরও পাওয়া যায়।
মণ্ডার গুণগত বৈশিষ্ট্য
মণ্ডার প্রতিটি দানা যেন স্বাদ, গন্ধ এবং মিষ্টতার এক নিখুঁত সংমিশ্রণ। এটি কেবল মিষ্টিই নয়, বরং দুধের রসায়ন ও বাংলার শিল্পচর্চার এক রসাল প্রতিফলন।
বাংলাদেশের আতিথেয়তা ও মিষ্টি আপ্যায়নে মুক্তাগাছার মণ্ডার জায়গা আলাদা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন কেউ মুক্তাগাছা থেকে আসেন, তখন আত্মীয়রা প্রথমেই প্রশ্ন করেন—”মণ্ডা এনেছো তো?” এই এক বাক্যই বলে দেয় মণ্ডার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কতটা গভীর।
শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে, ঈদ বা দুর্গাপূজার সময় মণ্ডার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেকে আগাম অর্ডার দিয়ে রাখেন, অনেকে আবার নিজে গিয়ে দোকান থেকে নিয়ে আসেন—এমনকি ১০০ কিমি দূর থেকেও।
২০১৮ সালে মুক্তাগাছার মণ্ডার জন্য জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (GI) ট্যাগ প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে সরকারিভাবে এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। GI ট্যাগ পেলে এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির স্বীকৃতি বাড়বে বহুগুণে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের মিষ্টি রফতানিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীরা বিশেষ অর্ডার দিয়ে এই মিষ্টি আনান। বিমানে, হ্যান্ড ক্যারিতে কিংবা কুরিয়ারের মাধ্যমে এটি পৌঁছে যায় প্রবাসী বাঙালিদের কাছে।
মুক্তাগাছার মণ্ডার উৎপাদন ও বাণিজ্যের সাথে শতাধিক পরিবার সরাসরি যুক্ত। স্থানীয় গাভীর দুধ, শ্রমিক, কড়াই প্রস্তুতকারী, প্যাকেজিং—all মিলিয়ে এটি একটি মিনি ইকোনমিক জোন তৈরি করেছে। স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ বললেও ভুল হয় না।
আজকের দিনে যখন বাজার দখল করছে চকলেট, ওয়েস্টার্ন ডিজার্ট, কৃত্রিম মিষ্টি, তখনও মুক্তাগাছার মণ্ডা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়:
ই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে মুক্তাগাছার মণ্ডাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা সম্ভব।
মুক্তাগাছার মণ্ডা কোনো সাধারণ মিষ্টি নয়। এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবার, প্রজন্ম ও একটি জাতির গর্বের অংশ। এই মিষ্টি একদিকে যেমন অতীতের গৌরব বহন করে, তেমনি ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিগন্তও উন্মোচন করে। বাংলাদেশের যেকোনো কৃষ্টিপ্রিয় মানুষ, যে মাটির গন্ধ ও মায়া ভালোবাসে, তার কাছে মুক্তাগাছার মণ্ডা হলো এক অপূর্ব আবিষ্কার—যা মনকে মাতায়, স্মৃতিকে জাগায়।
আমাদের রয়েছে বিশ্বস্ত ডেলিভারী নেটওয়ার্ক যারা নিজ দায়িত্তে আপনাদের নিকট খাবার পৌঁছে দিবে
.
টাঙ্গাইলের চমচম
টাঙ্গাইলের বিলপাড়ার মিষ্টি
No account yet?
Create an AccountWill be used in accordance with our Privacy Policy
Reviews
There are no reviews yet.