

ডেলিভারী টিম
আমাদের রয়েছে বিশ্বস্ত ডেলিভারী নেটওয়ার্ক যারা নিজ দায়িত্তে আপনাদের নিকট খাবার পৌঁছে দিবে
ডেলিভেরী টিমের বৈশিষ্ট্য
- যথাসময়ে কাস্টমারের নিকট পণ্য পৌঁছে দেয়া এবং কাস্টমারের সন্তোষটি অর্জন করা
.
550.00৳ Original price was: 550.00৳ .500.00৳ Current price is: 500.00৳ .KG
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি: নরম তুলোর মতো এক মধুর বিস্ময়
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি হলো এক বিস্ময়কর মিষ্টি বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাদ্য, যা যুগের পর যুগ ধরে মানুষের রসনায় স্থান করে নিয়েছে। এদের মধ্যে কিছু মিষ্টান্ন শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির জীবন্ত নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত। নামেই রয়েছে এক অনন্যতা, আর স্বাদে ও গড়নে রয়েছে এক রাজকীয় মাধুর্য। নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি অনেকের কাছে হয়তো এখনও অজানা, তবে যারা একবার স্বাদ গ্রহণ করেছেন, তারা এর প্রশংসা না করে থাকতে পারেন না।
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টির নামকরণের ইতিহাস
বালিশ মিষ্টি’ নামটা প্রথম শুনলে যেকোনো মানুষের কৌতূহল জাগে। কেন এরকম অদ্ভুত ও আকর্ষণীয় নাম? মূলত এই মিষ্টির আকৃতি বড়, মোটা ও বালিশের মতো নরম হওয়ায় একে বালিশ মিষ্টি বলা হয়। অনেক সময় স্থানীয়রা একে “বালিশ সন্দেশ” নামেও ডাকেন। তবে এই মিষ্টির নামকরণের পেছনে এক জনপ্রিয় কাহিনি রয়েছে।
শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে নেত্রকোনার কোনো এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বিয়ের দাওয়াতে বড় আকৃতির একটি সন্দেশ তৈরি করেন, যা দেখতে একেবারে ছোট বালিশের মতো ছিল। সেই থেকেই এই মিষ্টির নাম হয় ‘বালিশ মিষ্টি’, যা ধীরে ধীরে নেত্রকোনার একটি স্বতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক চিহ্নে পরিণত হয়।
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টিদেখতে যেমন বড়সড়, তেমনি ভেতরে নরম, তুলতুলে ও রসালো। এর মূল উপাদান হলো খাঁটি ছানা ও দুধ। মিষ্টিটির ভেতরে সাধারণত কোনো ফিলিং থাকে না, তবে দুধের ঘন রস, চিনির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার এবং বিশেষভাবে প্রস্তুত ছানা এই মিষ্টিকে দিয়েছে এক অনন্য স্বাদ ও গঠন। এটি ঠাণ্ডা পরিবেশন করলে স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি তৈরি একটি পরিশ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি ধাপে রয়েছে নিখুঁত দক্ষতা, যা স্থানীয় মিষ্টির কারিগররা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিখে এসেছেন। একটি মানসম্পন্ন বালিশ মিষ্টি বানাতে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।
খাঁটি গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে এতে লেবুর রস বা ভিনেগার মিশিয়ে ছানা আলাদা করা হয়। এই ছানাই হলো বালিশ মিষ্টির প্রাণ।
ছানা ঠাণ্ডা করে মসৃণ করা হয় এবং চেপে খুবই নরম ও তুলতুলে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এটি হাত দিয়ে আলতোভাবে ফেটানো হয়।
মসৃণ ছানা দিয়ে বড় মাপে গোল বা লম্বাটে আকৃতির বালিশ বানানো হয়। মিষ্টির আকার সাধারণ সন্দেশের চেয়ে অনেক বড়।
একটি বিশেষ পাত্রে মিষ্টিকে একটানা কম আঁচে দুধ ও চিনি মিশিয়ে রসে রাখা হয়। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো মিষ্টি দুধে ডুবে থাকে, যাতে এটি রস শুষে নিতে পারে।
শেষ ধাপে এটি ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করা হয়। অনেক দোকান ঠাণ্ডা রাখতে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে পরিবেশন করে থাকেন।
নেত্রকোনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে বালিশ মিষ্টির সম্পর্ক গভীর। এই মিষ্টি কেবল একটি খাবার নয়, এটি নেত্রকোনার গর্ব, আতিথেয়তার প্রতীক, এবং স্থানীয় ব্যবসা ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিয়ে, উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন, জন্মদিন—সব ধরনের অনুষ্ঠানে এই মিষ্টির ব্যবহার লক্ষণীয়।
স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলোর মধ্যে “মা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার”, “গোপাল মিষ্টান্ন ঘর”, “নেত্রকোনা হাউজ অব মিঠাই” অন্যতম। এসব দোকানে প্রতিদিন শত শত বালিশ মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয়ে যায় দুপুরের আগেই।
নেত্রকোনার স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা ইতিমধ্যে বালিশ মিষ্টির জন্য জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (GI) ট্যাগ দাবি জানিয়েছেন। কারণ এটি শুধু স্থানীয় নয়, বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য একটি অনন্য পণ্য। GI ট্যাগ পেলে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি পাবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে।
আজকাল বালিশ মিষ্টির বিভিন্ন ধরনের ভ্যারিয়েশন তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ এর মধ্যে ড্রাই ফ্রুটস, কাজু, কিশমিশ বা নারিকেল ভরাও করছেন। যদিও ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি সাধারণত ছানা, দুধ ও চিনি দিয়েই তৈরি হয়।
অনেকেই এটি ঠাণ্ডা পরিবেশন করেন, আবার কেউ কেউ হালকা গরম করে পরিবেশন পছন্দ করেন। অনেকে পছন্দ করেন এর সাথে এক কাপ চা বা ঘোল, যেটা এর স্বাদকে আরও সুন্দরভাবে প্রকাশ করে।
নেত্রকোনার প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন দুর্গাপুরের পাহাড়, বিজয়পুর চিনামাটি পাহাড় বা কলমাকান্দা ঘুরতে। এসব দর্শনার্থীর জন্য বালিশ মিষ্টি একটি অন্যতম আকর্ষণ। তারা শহর ছাড়ার আগে নেত্রকোনার কোনো বিখ্যাত দোকান থেকে বালিশ মিষ্টি কিনে নেন এবং অনেকেই আত্মীয়-স্বজনদের উপহার হিসেবেও এটি নিয়ে যান।
বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য তৃষ্ণার্ত। যদি উপযুক্তভাবে প্যাকেজিং এবং রপ্তানির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে বালিশ মিষ্টি হতে পারে বাংলাদেশি এক অনন্য রফতানি পণ্য। খাঁটি দুধ ও ছানা দিয়ে তৈরি এই মিষ্টি স্বাস্থ্যসম্মতও, যা একে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী করে তুলতে পারে।
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টির জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ:
নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি শুধু একটি খাবার নয়, এটি একটি গল্প, এক আত্মপরিচয়, এক গৌরব। বালিশ মিষ্টির নরমতা যেমন মন ছুঁয়ে যায়, তেমনি এর প্রতিটি কামড়ে মেলে ধরা হয় নেত্রকোনার মাটির গন্ধ, দুধের স্নিগ্ধতা এবং শত বছরের ঐতিহ্যের কাহিনি।
যারা এখনো বালিশ মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করেননি, তারা একদিন নেত্রকোনা ভ্রমণে গিয়ে অবশ্যই এই মিষ্টির স্বাদ নিন। আপনি অবাক হবেন—কীভাবে একটি মিষ্টি এতটা স্নিগ্ধ, এতটা নরম, আর এতটা হৃদয়গ্রাহী হতে পারে।
বালিশ মিষ্টি — মিষ্টির রাজ্যে এক নির্ভুল স্বাদ ও ঐতিহ্যের স্পর্শ।
আমাদের রয়েছে বিশ্বস্ত ডেলিভারী নেটওয়ার্ক যারা নিজ দায়িত্তে আপনাদের নিকট খাবার পৌঁছে দিবে
.
টাঙ্গাইলের চমচম
টাঙ্গাইলের বিলপাড়ার মিষ্টি
No account yet?
Create an AccountWill be used in accordance with our Privacy Policy
Reviews
There are no reviews yet.